পাখি পালনে চা মিশ্রণ এর বিভিন্ন ব্যাবহার ও উপকারিতা
প্রকৃতিতে বা জঙ্গলে আমরা প্রানিকুলদের কে দেখি, জঙ্গলের জলাশয়ের ময়লা পানি খেতে। কিন্তু এভিয়ারিতে পাখীদের কে আমরা ফোটানো এবং ফিল্টার করা পানি খেতে দেয়। সেভাবেই আমাদের মেন্টররা আমাদের কে শিখিয়েছেন। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, “পাখিরা জঙ্গলে ফোটানো এবং ফিল্টার করা পানি কোথায় পায়?” ওরাতো যেখানে সেখানের ময়লা নোংরা পানি খায়।
আচ্ছা, আসুন শিখি, আসলে পাখিরা কি পানি খায়?
ফুল, পাতা, ডাল, ওষধি গাছ গাছড়া, শিকড়, বাঁকল ইত্যাদি প্রকৃতির পানির সাথে মিশে সূর্যের আলো ও তাপে ঘনীভূত হয়ে তৈরি হয় প্রাকৃতিক চা। যা জঙ্গলের জলাশয়ে দেখা যায়। আর পাখিসহ অন্যান্য সকল প্রানি সেই পানি খায়। এই চায়ের অনেক গুনাগুন আছে, যা জীবিত প্রাণীদের স্যাস্থের জন্য বিশেষ উপকারী। বিশেষ করে আমাদের পাখিদের জন্য। পাখিরা গাছের গায়ে থাকা গর্ত থেকেও পানি পান করে। সেখানে গাছের শরীরের বিভিন্ন অংশের মিশ্রণ থাকে। সেই পানি গাছের কষ দ্বারা পরিশুদ্ধ হয়। আর, পাখি সেই মিশ্রিত পানি বা চা পান করে। তারা জানে যে এই পানি তার শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী।
আসলে আমরা যে চা পান করি, তা কি বা কোথা থেকে আসলো? সেই রহস্য জানলেই, আমরা বুঝে যাব, পাখি জঙ্গলে যে নোংরা পানি খায়, তা আসলে কি?
পাঁচ হাজার বছর আগের একটি কাকতালীয় ঘটনাই আজকের ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপের পর্দার পেছনের কাহিনী।
প্রাচীন চীনের সম্রাট ছিলেন ‘শেন নাং’, চায়ের কথা বললে যার নাম বলতেই হয়। পাঁচ হাজার বছর আগের এই সম্রাট ছিলেন দারুণ স্বাস্থ্যসচেতন। একবার তিনি ডিক্রী চালু করলেন যে তার প্রজাদের সবাইকে পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। তো একদিন বিকেলে রাজকার্যের ক্লান্তি দূর করার জন্য ক্যামেলিয়া গাছের নিচে বসে সম্রাট ফুটানো গরম পানি পান করছিলেন, কোত্থেকে যেন তার গরম পানির পাত্রে এসে পড়লো কয়েকটি অচেনা পাতা। পাতাগুলো পানি থেকে বের করার আগেই তার নির্যাস মিশে যেতে লাগলো পানির সাথে আর ভোজবাজির মত পাল্টাতে লাগলো পানির রং। কৌতূহলী সম্রাট শেন নাং ভাবলেন এ নির্যাসও একবার পান করে দেখে নেওয়া যাক। যেই ভাবা সেই কাজ, নির্যাসমিশ্রিত এ পানি পান করার পর নিজেকে অন্যদিনের চাইতে অনেক বেশি চনমনে লাগলো তার। ঘুম ঘুম ভাব কেটে গেলো, ক্লান্তি দূর হলো আর সম্রাটও নতুন স্বাদ পেয়ে খুশি। এরপর অনেক খুঁজেটুজে পাওয়া গেল পাতাটির উৎস- ‘ক্যামেলিয়া সিনেনসিস’ গাছ। সেই শুরু থেকে চীনারা করে আসছেন চায়ের পৃষ্টপোষকতা। এক চীনা মনিষী “লাওৎ সে” চাকে বলেছেন ‘মহৌষধি’ বা ‘পরশমণি’। প্রাচীন চীনারা তো এও বলে গেছেন, “চায়ের মত এমন প্রাকৃতিক সুঘ্রাণ আর কিছুতে নেই”। আর এ কথার জের ধরেই হয়তো আজ চায়ের নির্যাসে তৈরী হয়েছে মোহময় বিভিন্ন সুগন্ধিও।
তাহলে বোঝা গেল, প্রানিকুল জঙ্গলে যে পানি পান করে তা আসলে একপ্রকার প্রাকৃতিক চা। আর এর বহুবিধ ঔষধি গুনাগুণই পাখীদের কে টেনে আনে তা পান করতে। যদিওবা আমরা যারা এভিয়ারিতে পাখি পালন করি, তাদের জন্য পরিষ্কার পানির বিকল্প নেই । তাই এটা ভাবার কোন কারন নেই যে, আমি এভিয়ারি পাখীদের শুধুমাত্র চা দিতে বলছি। এই লেখার মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে, কিভাবে আমরা পাখীদের কে প্রাকৃতিক ভাবে সুস্থ্য রাখতে পারি। বোঝাতে চেষ্টা করবো, বিভিন্ন রকমের চা এর ব্যাবহারের মাধ্যমে কিভাবে পাখীদের কে প্রাকৃতিক ভাবে সুস্থ্য রাখা যায়। পৃথিবী বিখ্যাত এভিয়ান পশু চিকিৎসক ও ঔষধ বিশেষজ্ঞ Karen Becker, DVM, NMD ম্যাডাম এভিয়ারির পাখীদের কে বিভিন্ন চা এর মিশ্রণ এর ম্যাধমে প্রাকৃতিক চিকিৎসা কে সমর্থন করেন।
বিভিন্ন ধরনের চা মিশ্রণ নিজে বানিয়ে পাখিকে দেয়া যেতে পারে। যা পাখীদের কে বিভিন্নভাবে উপকার করবে। যেমন – ত্বক ও পালক এর সুস্থতা, রোগ প্রতিরোধক হিসাবে, বিষাক্ত উপাদান অপসারন করার জন্য, পাখির শরীরের বিভিন্ন অন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য, পরিপাক ক্রিয়া সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য, শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা, ওজন কমানোর জন্য ও চর্বি কাটানো এবং হরমোনাল ব্যালান্স এর জন্য।
প্রথমে আমরা জানবো, সাধারনত আমরা যে চা পান করি, সেটার ব্যাপারে। চা গাছ থেকে চা পাতা পাওয়া যায়। চা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনসিস। ‘চা পাতা’ কার্যত চা গাছের পাতা, পর্ব ও মুকুলের একটি কৃষিজাত পণ্য যা বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত করা হয়। পাতা যত কচি হবে তত এতে ক্যাফাইন বেশি থাকবে। তাই পরিবেশনের আগে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ক্যাফাইনমুক্ত করে নিতে হবে। অরগানিক পদ্ধতিতে চাষ করা হলে সবচেয়ে ভাল হয়। জেনে রাখা ভাল, শুধুমাত্র ক্যামেলিয়া সিনেনসিস গাছের পাতা থেকে উৎপাদিত চা তে ক্যাফাইন থাকে।
এখন আশা যাক হারবাল চা এর ব্যাপারে। হারবাল চা বিভিন্ন গাছের ফুল, পাতা, কাণ্ড, শিকড় বা গাছের যেকোন অংশ থেকে তৈরি হতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত হয়ে, প্রাকৃতিক ভাবে শুকিয়ে এই চা বাজারজাত করা হয়। আলাদা আলাদা হারবাল চা তে, এই পাতার মধ্যে বিদ্যমান রাসায়নিক মিস্রনের উপস্থিতির কারনে আলাদা আলাদা স্বাস্থ্যগত উপকারিতা আছে।
By Firoz Reza
Date: 16.04.2019
Facebook Group: Budgerigar Society Of Bangladesh
এছাড়াও পড়তে পারেনঃ
বাড়িতেই বানিয়ে নিন পাখির প্রিয় খাবা সফটফুড
“হিট স্ট্রোক” গরমের সবচেয়ে ভয়াবহ সমস্যা ও সমাধান!
পাখির সাধারন রোগ ও তা প্রতিকার!
No Comments