পাখি পালন করতে হলে যেসব বিষয়গুলো জানা অত্যান্ত জরুরী
সবার আগে যেই জিনিসটা প্রয়োজন নিজের “Common Sense” উন্নত করা ! চোখ ছাড়া যেরকম যতই শিখানো হোক ঠিক মত হাটা যায়না সেরকম এটা ছাড়াও শিক্ষার মূল্য নাই…
গ্রূপে প্রায় দেখি পোস্ট দেয়া হয় “ভাই আমার পাখি ঝিমাচ্ছে” / “পাখির নড়চড়া কম” / “পাখির ঠান্ডা লাগসে” / “পাখি লোম ফুলায় বসে আছে কি ওষুধ দিবো” —– আপনি যদি এরকম কিছু পোস্ট করে থাকেন দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে আপনার পাখির ব্যাপারে “Common Sense” গড়ে উঠেনি! প্রায় সবরকম রোগের জন্যই এরকম লক্ষণ দেখাবে পাখি! আরো অবাক হয়ে যাই যখন দেখি কেউ কেউ এই সামান্য তথ্য পেয়ে ২/৩টা ওষুধ দিয়ে দেয়…
ধরা যাক আপনার জ্বর অথবা এইডস অথবা ক্যান্সার হয়েছে – আপনি বিছানায় শুয়ে গায়ে কাঁথা দিয়ে ঝিমাবেন এটাইতো? তাহলে যদি ডাক্তারকে বলা হয় আপনি ঝিমাচ্ছেন – সে কি বুঝবে?
জন্ম, মৃত্যু, রোগব্যাধি এটা জীবনেরই অংশ… আমাদের প্রিয় পাখিরও রোগব্যধি হবে – এটাই স্বাভাবিক! পাখির চিকিৎসা করার আগে আপনার বুঝতে হবে পাখি ভালো আছে নাকি খারাপ আছে – চিকিৎসা করা অনেক পরের ব্যাপার! আপনি যদি বুঝতেই না পারেন পাখি কি চাচ্ছে অথবা ভালো আছে না খারাপ আছে তাহলে চিকিৎসা করবেন কিভাবে!
কিভাবে বুঝবো পাখি অসুস্থ?
১. পাখি খাচ্ছে… ঘুরছে… ফিরছে… এর মানেই না যে পাখির কোনো রোগ নাই! অনেক রোগে পাখি ৩-৪ মাস ধরে ভুগার পর একদম শেষ সময়ে এসে ঝিমানো শুরু করে। যখন আর কিছু করার থাকেনা – Organ Damaged! প্রায় দেখা যায় ব্রিডিং এর সময়ে দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে লক্ষণ দেখানো শুরু করে, কিন্তু এই পাখিটা অনেক আগে থেকেই অসুস্থ!
২. পাখির এক্টিভিটিজ দেখে – অসুস্থ পাখি নড়াচড়া কম করবে, ঝিমাবে, খাবে কম, বুক/লেজ উঠানামা করবে, লোম ফুলায় বসে থাকবে, হা করবে একটু পরপর, ঢোক গিলবে, বেশি বেশি গা চুলকানো। এক কথায় — সাধারনত; করতো না কিন্তু এখন করে এরকম নুতুন কিছু লক্ষণ দেখা যাবে!
৩. পাখির শরীলে বাহ্যিক কোনো কাটা-ছেড়া, কোথাও ফুলে যাওয়া, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লোম পরে যাওয়া, ভেন্ট/নাক ভিজে থাকা।
৪. পুপ দেখে; এটা খুবই প্রয়োজনীয় লক্ষণ! পুপের ৩টা অংশ আছে:
এই ৩টা অংশের রঙের উপর বুঝা যায় অনেক কিছু। পাখির খাবারের উপরেও রং ভিন্ন হতে পারে, সেক্ষেত্রে কি কি খাওয়ানো হয় সেটাও জানতে হবে।
৫. পাখির নিচের ব্লিকের ভিতরের অংশ দেখে
৬. পাখির ক্রপ দেখে:
৭. পাখির চোখ ও চোখের আশেপাশে দেখে
৮. পাখির পা দেখে:
৯. পাখির ব্লিকের বাইরের অংশ দেখে
১০. পাখির বুক, পেট, লিভার ও ভেন্ট দেখে
– এটাও খুবই প্রয়োজনীয় লক্ষণ।
উপরের ১০টি পয়েন্ট দেখে ৯০% রোগ ধরা যায়, এরপরও কিছু রোগ আছে যেটা ধরা সম্ভব হয়না – সেক্ষত্রে আমাদের আন্দাজের উপর ডিডাকশন মেথড ব্যবহার করে পাখিকে সুস্থ করতে চেষ্টা করতে হয় অথবা নিচের ২টা পদ্ধতিতে চেষ্টা করতে হয়।
১. ফোল্ডস্কোপ ব্যবহার করে পাখির পুপে চাইলেই মাইটস, ফাংগাস ও ব্যাকটেরিয়া দেখা যায় – যেটা আপনি খালি চোখে দেখতে পারবেন না! এটা ব্যবহার করে E.Coli এর মতো রোগ খুব সহজে ধরা সম্ভব – সেক্ষত্রে আপনার জানতে হবে কোন ব্যাকটেরিয়া দেখতে কেমন।
২. ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে – ছোট পাখি সাধারণতো এটা করা হয়না – আমাদের যাদের পরিচিত আছে তারা চাইলে icddr,b তে ব্লাড ওয়ার্ক করিয়ে নিতে পারে। খুব বেশি টাকা লাগেনা।
খুব সংক্ষেপে লিখবো ভেবেও বিশাল পোস্ট হয়ে গেছে – অন্য কোনোদিন রোগের ব্যাপারে লিখার চেষ্টা করবো, আজ আর না! এই পোস্টটি পরে এতক্ষনে আপনার বুঝতে পারার কথা আপনার পাখি সুস্থ কিনা, এটা বুঝতে পারাও অনেক বড় একটা ব্যাপার – Grow Your Common Sense, Happy Bird keeping!
Note: পোস্টটি চাইলে কপি/পেস্ট/শেয়ার করতে পারবেন – আমাকে কোনো ক্রেডিট দিতে হবেনা 🙂
©Sakib Nizam
No Comments